ইউটিউব শুরু হয়েছিল ছোট আকারে- তিন তরুণ তুর্কির হাতে, এক বিলিয়ন ডলারে পরে সেটা কিনে নিয়েছিল গুগল।
এই ধরনের ছোট কিন্তু ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনকে কিনে নেওয়ার প্রবণতা ইন্টারনেটে এখন হরহামেশাই দেখা যায়৷ বড়ো কম্পানির কাছে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নতুন ও প্রতিশ্রুতিশীল কম্পানিগুলো। একদা ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাবির ভাটিয়ার হটমেইল কিনে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিল মাইক্রোসফট। ছোট্ট অর্কুটকে কিনে এখনো তার ভার বহন করে যাচ্ছে গুগল। সেই গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক স্মিথ একবার বলেছিলেন, প্রতি মাসে অন্তত একটি প্রতিষ্ঠানকে অর্জন বা কিনে নেবে গুগল৷এ থেকে তাদের 'শপিং ক্ষুধা' বুঝতে অসুবিধা হয় না। মনে পড়ে, অনেক আগে এক লেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলাম, গুগল ভারতেই শুধু নয়, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায়ও তাদের রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়োগ দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশের দিকে তাদের নজর নেই। সেই গুগল যে তার ইণ্ডিয়া অফিসের মাধ্যমে বাংলাদেশের দিকে নজর রাখছে- এটা খুব কম লোকেরই হয়তো জানা ছিল। এর আগে তারা গুগল ম্যাপসের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের ম্যাপ তৈরি করেছে। বছরকয়েক আগে বাংলা ভাষায় সীমিতাকারে গুগলের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ইণ্ডিয়া অফিসের মাধ্যমে। গুগলের বিভিন্ন সেবার ইন্টারফেস যেমন এখন প্রায় পুরোপুরি বাংলায় দেখা যাচ্ছে, তেমনি বাংলা-ইংরেজি অভিধান, ফোনেটিকে বাংলা লেখার মতো টুলও ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি। বাংলা সিনেমাগুলোকে ইউটিউবে জড়ো করাও গুগলের দীর্ঘদিনের একটি পরিকল্পনা, একইসঙ্গে বাংলার ক্লাসিক বইগুলোরও ডিজিটাল রূপ দিতে চায় তারা।

ব্লগার ডট কম কেনার মধ্য দিয়ে 'ব্লগের শক্তিকে কব্জা' এবং নিজেদের বিপণনে লাগানোর কাজ শুরু করেছিল গুগল। সেটা প্রকাশ্যে, তবে গত বছরের অক্টোবরে গুগল ভারতে হিন্দি ভাষাভাষীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফোরাম 'নমস্তে' কিনে নিয়েছিল প্রায় নিরবেই। প্রকৃতপক্ষে গুগলই শুধু নয়, মাইক্রোসফটও এখন বিশ্বজুড়ে স্থানীয় ভাষাগুলো নিয়ে আরো বেশি করে কাজ করতে চাইছে। স্থানীয় ভাষাকে অবলম্বন করে সহজে স্থানীয় বাজারে প্রভাব বিস্তারই তাদের লক্ষ্য। যতোটুকু জেনেছি, তাতে দেখা যায় এরপর থেকে গুগল বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষার জনপ্রিয় ব্লগ, ফোরাম, প্রযুক্তিবিষয়ক ফোরাম, স্থানীয় ভাষার জনপ্রিয় পোর্টাল অধিগ্রহণ করেছে অনির্দিষ্টসংখ্যক। মজার ব্যাপার হল, গত জানুয়ারিতে ফরাসি ফোরাম ‌'লা প্লাম ডি'আলিওচা', যা কিনা প্রধানত মহিলাদের মধ্যেই তুমুল জনপ্রিয়, গুগলের কাছে সেটা বিক্রি করে দেওয়ার প্রতিবাদে তার কয়েক হাজার সদস্য ফেসবুকে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে এখনো। তবে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে, এখন পর্যন্ত গুগলের কেনার তালিকায় চীনা কোনো ব্লগ বা ফোরামের নাম দেখা যায়নি। অনেকেরই হয়তো মনে থাকবে, সম্প্রতি চীন সরকারের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে গুগল চীন থেকে তাদের ব্যবসা পুরোপুরি গুটিয়ে নিয়েছে। চীনা ব্লগ বা ফোরামের প্রতি গুগলের অনাগ্রহের কারণ হয়তো সেটাই হবে। এই মার্চে গুগল বাংলাভাষাভাষী ব্লগ 'সামহোয়্যারইন ব্লগ-বাধভাঙ্গার আওয়াজ' ছাড়াও স্প্যানিশ ফোরাম 'এল ব্লগ ডি মানু' এবং ইন্দোনেশীয় ফোরাম 'ক্যাটালার সাওয়ালি' অধিগ্রহণ বা কিনে নেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। সামহোয়্যারইনব্লগ অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্ত কাজ গুগল ইণ্ডিয়া অফিসের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে।

সামহোয়্যারইন ও গুগল ইন্ডিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে যে বিনিময়মূল্যের কথা শুনেছি, সেটা খুব বেশি কিছু মনে হয়নি। তবে তুলনামূলক কম মূল্যে গুগলের কাছে, তা যতো বড়ো কম্পানিই হোক না কেন, বিলীন হয়ে যাওয়াটা আমার নিজের কাছে ভালো লাগেনি। স্থানীয় ভাষার জনপ্রিয় ব্লগ ও ফোরাম অধিগ্রহণ সংশ্লিষ্টদের জন্য লাভজনক নিশ্চয়ই, তবে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হয়তো দেখা যেতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে এই ধরনের অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে। কারণ এতে বিশ্বপরিচিতি মেলে বটে, সেবার মানও হয়তো উন্নত হয়, কিন্তু উল্টো পিঠে অধিগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির কাছে সৃজনশীলতা বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। একমাত্র ভবিষ্যতই বলে দেবে, এই আশঙ্কা সত্যি কি মিথ্যা।

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): banglablogবাংলা ব্লগbangla blogsomewherein...blogsomewhereinbloggoogleapril foolhoax ;

প্রথম প্রকাশ

0 Comments

Add Yours